অনিরাপদ সড়ক পথ,পর্ব-২
শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো সিএনজি স্ট্যান্ড,অনুমোদন নেই একটিরও
- আপলোড সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০৮:০০:১২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০৮:০০:১২ পূর্বাহ্ন

শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জ শহরের প্রধান সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে যানজট সমস্যা। দিনের বেশিরভাগ সময় যানজট বিরম্ভনায় পড়তে হয় শহরবাসীকে। যানজট সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে শহরবাসী দায়ি করছেন সিএনজি ও ইজিবাইককে। শহরের সড়ক পথের ধারণ ক্ষমতা চেয়ে কয়েকগুণের চেয়েও বেশি পরিবহন চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র বলছে, শহরতলী ও আশেপাশের এলাকায় বৈধ অবৈধ মিলে চলাচল করছে কয়েক হাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশা। এছাড়াও জেলা শহরের সাথে আভ্যন্তরীণ সড়কে এর চেয়ে কয়েকগুন সিএসজি চলাচল করছে। যার বেশিরভাগের অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুমোদনহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে মাসিক হারে অর্থনৈতিক সু¡িধা দিয়ে ট্রাফিক বিভাগ ও শ্রমিক সংগঠনের যোগসাজশে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার এই যান। এসব পরিবহন ঘিরে সুনামগঞ্জ শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে স্থায়ী-অস্থায়ী স্ট্যান্ড।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেবল পৌরসভার ভেতরেই রয়েছে ৯টি সিএনজি স্ট্যান্ড। শহরের ওয়েজখালী সড়কে অবস্থিত সিএনজি স্ট্যান্ড হতে ঠুকেরঘাট ও জগন্নাথপুর যাতায়াত করেন যাত্রীরা। আব্দুজ জহুর সেতুর উপরও রয়েছে নিচে দুইটি অস্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড। সেখান থেক তাহিরপুর, জামালগঞ্জ সড়কে যাতায়াত করা হয়। পুরাতন বাস্ট্যান্ড এলাকার দুই পাশে দুইটি স্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ডসহ সাথে রয়েছে লেগুনা ও মাইক্রোবাসে স্ট্যান্ড। যেখান থেকে ছাতক গোবিন্দগঞ্জ সড়ক, দিরাই-শ্যামারচর সড়ক ও পাগলাবাজার সড়কে যাতায়াত করা হয়। ট্রাফিক পয়েন্টে দুই দিকে অস্থায়ীভাবে শহরের আভ্যন্তরীণ যাতায়াতে সুবিধার জন্য ব্যবহার হচ্ছে সিএনজির দুইটি অস্থায়ী স্ট্যান্ড। এছাড়াও শিল্পকলার ও স্টেডিয়ামের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে দুইটি স্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড। যেখান থেকে আমবাড়ি, কাটাখালি, আজমপুর ও বেতগঞ্জ সড়কে যাতায়াত করেন যাত্রীরা।
সূত্র বলছে, এই স্ট্যান্ড থেকেই শহর ও শহরের বাহিরের সড়ক পথ নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। শ্রমিক সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন এই সিএনজি স্ট্যান্ডগুলো পরিচালিত হয়ে আসলেও ট্রাফিক বিভাগ বা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেয়া হয়নি কোনো অনুমোদন। অভিযোগ রয়েছে সিএনজি স্থায়ী স্ট্যান্ড থেকে মাসিক হারে চাঁদা যায় শ্রমিক সমিতির অফিসে। যার অংশ যাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এছাড়াও এসব সড়কে চলাচলরত বৈধ ও অবৈধ সিএনজি হতে মাসিক হারে টোকেন ফ্রি হিসেবে ২৫০-৩০০ টাকা যাচ্ছে শ্রমিক সংগঠনের কাছে। যার ভাগ পেয়ে নাকি অনুমোদনহীন সিএনজি স্ট্যান্ডের আনঅফিশিয়ালি বৈধতা দিয়ে যাচ্ছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিএনজি চালক জানান, তারা প্রতিমাসে সমিতিকে টাকা দেন। যে টাকা ভাগ বিভিন্ন অফিসে যায়। এই টাকা দিয়ে শ্রমিক নেতাদের বেতন হয়। তারা তাদের বিপদে আপদে আগলে রাখেন। তাছাড়া সিএনজি স্ট্যান্ডের নাম্বার লেখার পর যাত্রী নিয়ে গেলে নির্দিষ্ট ম্যানেজারকে টাকা দিতে হয়। এটা অনেক দিনের বলে জানান তারা।
এদিকে শহরে স্থানে স্থানে সড়ক দখল করে সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহনে স্ট্যান্ড হওয়ায় সড়ক সংকীর্ণ হয়ে আসছে। সড়ক সরু হওয়ায় দেখা দিচ্ছে বিপত্তি। তাছাড়া ধারণ ক্ষমতার চেয়ে পরিবহন বেশি হওয়ার যানজট সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। একটি মফস্বল শহরে এতোগুলা সিএনজি স্ট্যান্ড নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সচেতন নাগরিকরা।
সুনামগঞ্জ নিরাপদ সড়ক চাইয়ের সহ-সভাপতি ওবায়দুল হক মিলন বলেন, একটি ছোট্ট শহরে এতো সিএনজি স্ট্যান্ডের অনুমোদন কারা দিয়েছে। শহরে এতো অবৈধ যান চলাচল করছে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সড়ক নিরাপদ রাখতে এর লাগাম টানা প্রয়োজন।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা সিএনজ চালিত অটোরিকশা মিশুক ও টেক্সিকার ড্রাইভার্স ইউনিয়ন সাধারণ স¤পাদক আল আমীন কালা জানিয়েছেন, সিএসজি স্ট্যান্ডগুলো তাদের তত্ত্বাবধানে চলে। লিখিত কোনো অনুমোদন না থাকলেও পৌর প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে মৌখিক অনুমোতি নিয়ে স্ট্যান্ডগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশর টিআই মো. হানিফ মিয়া বলেন, আমরা কোনো সিএসজি স্ট্যান্ডের অনুমতি দেইনি। আমরা এটা দিতেও পারি না। তবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, পৌর কর্তৃপক্ষের যৌথ সিদ্ধান্তে সিএনজি স্ট্যান্ড হয়ে থাকে। আমরা সড়কের উপরে কোনো স্ট্যান্ড রাখবো না। পরিবহন শ্রমিকদের বলা হয়েছে। সড়কের উপরে সিএসজি অটোরিকশা থাকলে তা রেকার করে নিয়ে আসা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ